প্রশ্ন
কেয়া চ্যাটার্জী
এক বাড়িতে একটা বিড়াল ছিল। তার ভীষণ লোভ ছিল মাঠের পাশে আমগাছে বাসা বাধা ফিঙে পাখিটার ওপর। বিড়ালটা রোজ একটা করে মাছ চুরি করে এনে আমগাছের গোড়ায় বসে ফিঙেকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেত। যেন বলতো তোকেও এইভাবেই খাবো। ফিঙে তার বাচ্চাদের আগলে রেখে ভাবতো কবে ওরা বড় হবে আর এই বাসা ছেড়ে উড়ে যেতে পারবে।
একদিন পাখিটা দেখল, গাছের নিচে একটা লোক একটা কাপড় মোড়া ঝুড়ি নিয়ে এসে বসল। ঘর্মাক্ত কলেবরে, গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচার জন্য একটু আশ্রয় নিল গাছের ছায়ায়। কিছুক্ষন পরেই নাক কুঁচকে তাকাল গাছের নীচে পড়ে থাকা মাছের আঁশ-কাঁটার দিকে। সে তার ঝুড়ি থেকে কিছু ফুল ফেলে দিল ওই আবর্জনার ওপর। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। সূর্য পাটে গেলে ফিঙে দেখল কে একজন ওই ফুলের সামনে মোমবাতি আর ধুনো জ্বালিয়ে চলে গেল।
পরেরদিন সকালে বিড়াল এসে দেখে তার সাধের খাওয়ার জায়গাটা কারা যেন নোংরা করে দিয়েছে। সে থাবা দিয়ে পরিষ্কার করতে যেতেই কিছু লোক রে রে করে তেড়ে এলো তার দিকে। সেদিনের মতো বিড়াল পালিয়ে বাঁচল।
ক্রমে দিন যায়, মাস যায়, এম গাছের নীচে রোজই কিছু লোক এসে শব্দ করে কি সব বলে। মানুষের ভাষার তুলনায় সে ভাষা একটু দুরূহ। অন্তত বিড়াল বা ফিঙে সেসব ভাষা এর আগে কখনো শোনেনি। এরপর জায়গাটায় বাড়ি উঠল। পাশাপাশি দুটো বাড়ি। তাতে দুটি আলাদা রঙের পতাকা লাগানো। আমগাছের দুটো ডালও গেছে ছাঁটা। ফিঙে কোনোমতে বাসাটা সামলে রেখেছে। ফিঙে আর বিড়াল পরস্পরের দিকে করুণ মুখে চায়। তাদের সম্পর্কের সমীকরণটা কেমন পাল্টে গেল। এখন ফিঙে বিড়ালের পাশে উড়ে এসে বসে। বিড়ালেরও ইচ্ছে করে না ফিঙেকে খেয়ে ফেলতে। ফিঙে ছাড়া যে তার আর বন্ধু নেই।
একদিন আকাশ ছেয়ে মেঘ করল। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। আকাশে বুক কাঁপানো বিদ্যুতের ছটা। ফিঙের বাসা গেল ভেঙে। সে তার ভাঙা বাসা আর ছোট ছানাদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিড়াল তা দেখতে পেয়ে এক ছুট্টে বাইরে বেরিয়ে ছানা সমেত বাসাটা মুখে করে বাড়ির বারান্দায় এনে রাখল। ফিঙেও এসে বসল তার পিছু পিছু। কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ল তার মাথা।
সকালবেলা ভোর হওয়ার আগেই কি এক কোলাহলে বিড়াল আর ফিঙে বাইরে মাথা বের করে দেখে, কিছু লোক নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। দুটি রঙের পতাকা লুটিয়ে রয়েছে মাটিতে। হঠাৎ একজন আরেকজনের মাথা দিল ফাটিয়ে। হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড বেঁধে গেল চারিদিকে। রক্তের বন্যা যেন এলাকাময়। কেউ এল না ওদের থামাতে।
বিড়াল ফিঙেকে প্রশ্ন করল, “হ্যাঁ রে বন্ধু, মানুষ কি মানুষের মাংস খায়?”
ফিঙে দুপাশে মাথা নাড়ালো।
বিড়াল বলল, “তবে ওরা লড়ছে কেন?”
কেয়া চ্যাটার্জী
এক বাড়িতে একটা বিড়াল ছিল। তার ভীষণ লোভ ছিল মাঠের পাশে আমগাছে বাসা বাধা ফিঙে পাখিটার ওপর। বিড়ালটা রোজ একটা করে মাছ চুরি করে এনে আমগাছের গোড়ায় বসে ফিঙেকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেত। যেন বলতো তোকেও এইভাবেই খাবো। ফিঙে তার বাচ্চাদের আগলে রেখে ভাবতো কবে ওরা বড় হবে আর এই বাসা ছেড়ে উড়ে যেতে পারবে।
একদিন পাখিটা দেখল, গাছের নিচে একটা লোক একটা কাপড় মোড়া ঝুড়ি নিয়ে এসে বসল। ঘর্মাক্ত কলেবরে, গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচার জন্য একটু আশ্রয় নিল গাছের ছায়ায়। কিছুক্ষন পরেই নাক কুঁচকে তাকাল গাছের নীচে পড়ে থাকা মাছের আঁশ-কাঁটার দিকে। সে তার ঝুড়ি থেকে কিছু ফুল ফেলে দিল ওই আবর্জনার ওপর। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। সূর্য পাটে গেলে ফিঙে দেখল কে একজন ওই ফুলের সামনে মোমবাতি আর ধুনো জ্বালিয়ে চলে গেল।
পরেরদিন সকালে বিড়াল এসে দেখে তার সাধের খাওয়ার জায়গাটা কারা যেন নোংরা করে দিয়েছে। সে থাবা দিয়ে পরিষ্কার করতে যেতেই কিছু লোক রে রে করে তেড়ে এলো তার দিকে। সেদিনের মতো বিড়াল পালিয়ে বাঁচল।
ক্রমে দিন যায়, মাস যায়, এম গাছের নীচে রোজই কিছু লোক এসে শব্দ করে কি সব বলে। মানুষের ভাষার তুলনায় সে ভাষা একটু দুরূহ। অন্তত বিড়াল বা ফিঙে সেসব ভাষা এর আগে কখনো শোনেনি। এরপর জায়গাটায় বাড়ি উঠল। পাশাপাশি দুটো বাড়ি। তাতে দুটি আলাদা রঙের পতাকা লাগানো। আমগাছের দুটো ডালও গেছে ছাঁটা। ফিঙে কোনোমতে বাসাটা সামলে রেখেছে। ফিঙে আর বিড়াল পরস্পরের দিকে করুণ মুখে চায়। তাদের সম্পর্কের সমীকরণটা কেমন পাল্টে গেল। এখন ফিঙে বিড়ালের পাশে উড়ে এসে বসে। বিড়ালেরও ইচ্ছে করে না ফিঙেকে খেয়ে ফেলতে। ফিঙে ছাড়া যে তার আর বন্ধু নেই।
একদিন আকাশ ছেয়ে মেঘ করল। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। আকাশে বুক কাঁপানো বিদ্যুতের ছটা। ফিঙের বাসা গেল ভেঙে। সে তার ভাঙা বাসা আর ছোট ছানাদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিড়াল তা দেখতে পেয়ে এক ছুট্টে বাইরে বেরিয়ে ছানা সমেত বাসাটা মুখে করে বাড়ির বারান্দায় এনে রাখল। ফিঙেও এসে বসল তার পিছু পিছু। কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ল তার মাথা।
সকালবেলা ভোর হওয়ার আগেই কি এক কোলাহলে বিড়াল আর ফিঙে বাইরে মাথা বের করে দেখে, কিছু লোক নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। দুটি রঙের পতাকা লুটিয়ে রয়েছে মাটিতে। হঠাৎ একজন আরেকজনের মাথা দিল ফাটিয়ে। হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড বেঁধে গেল চারিদিকে। রক্তের বন্যা যেন এলাকাময়। কেউ এল না ওদের থামাতে।
বিড়াল ফিঙেকে প্রশ্ন করল, “হ্যাঁ রে বন্ধু, মানুষ কি মানুষের মাংস খায়?”
ফিঙে দুপাশে মাথা নাড়ালো।
বিড়াল বলল, “তবে ওরা লড়ছে কেন?”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thank you for your valueable comment.