বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

ইংরাজি সাহিত্যের ইতিহাস: চসারের যুগ।

History of English literature :
The Age of Chaucer :

একটি দেশের সাহিত্য সেই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে আবহমানকাল ধরে। চতুর্দশ শতাব্দীর দুটি ঘটনা ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটায়, যা ইংল্যান্ডের সাহিত্য চর্চার ওপর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব ফেলছিল।
     দীর্ঘ একশত বছরের যুদ্ধের ইতি ঘটিয়ে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড  চুক্তি অনুযায়ী দুটি আলাদা দেশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। এর ফলে ফরাসী ভাষা তার কৌলিন্য হারায় ও ইংরাজি ভাষা শুধু
  Geoffrey Chaucer: A prologue to the Canterbury Tales (with text) by Raghukul Tilak
সাধারণ মানুষের ভাষাই নয় রাজদরবারের ভাষা হিসেবে সম্মান অর্জন করে। দ্বিতীয়ত, এই সময় মানুষের চিন্তা ধারার কিছু পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। বহু প্রচলিত রাজ পরিবারের বিলাস বহুল জীবনযাপন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তোলেন। একদিকে রাজা  দ্বিতীয় রিচার্ড এর বিলাসী জীবন, অপরদিকে কর প্রদানকারী সাধারণ কৃষক মজুরদের দুর্বিষহ জীবন রাজার সিংহাসন টলিয়ে দেয়। ইংল্যান্ডে বিপ্লবের সঞ্চার হয়।

এই দুটি ঘটনা ছাড়াও, এই সময় অধিবাসীরা ব্যবসা বাণিজ্যে সাফল্য লাভ করে। তাদের দেশের মাটি ছেড়ে তারা সমুদ্রাভিযানে নামে। বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ স্থাপন করে, ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। তাছাড়া, স্পেন, ইটালি সহ ইংল্যান্ডে এই সময় রেনেসাঁসের আবির্ভাব ঘটে।

 চতুর্দশ শতকের এই দোলাচলপূর্ণ সময়ের পাঁচ জন কবি ইংরাজি সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করেন। Langland, Wycliffe, Gower, Mandeville, Chaucer.

  এঁদের মধ্যে চশার প্রভূত খ্যাতির অধিকারী হন। তাঁর লেখায় সমকালীন বিখ্যাত অ-ইংরেজ কবি যথা Dante, Petrarch, Boccaccio-র অনুপ্রেরণা পরিলক্ষিত হয়। ইংল্যান্ড ও ইতালীয় সাহিত্য ও বৌদ্ধিক পরিবর্তন সমগ্র ইউরোপীয় সাহিত্য ও চিন্তা ধারার ওপর প্রভাব ফেলেছিল।

Geoffrey Chaucer [1340-1400]

       চসারের জীবনকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রত্যেক পর্যায়েই তাঁর জীবনযাত্রা তাঁর লেখনীকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁর শৈশব কাটে লন্ডনে। সতেরো বছর বয়সে তিনি রাজকন্যা এলিজাবেথের কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ঊনিশ বছর বয়সে কুখ্যাত একশো বছরের যুদ্ধে তিনি সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। এই সময় তিনি জীবনকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন অথবা বলা যায় মৃত্যুকে খুব নিকটে আসতে দেখেছেন। এই সময়ে প্রাপ্ত জীবনবোধ বারবার উঁকি তাঁর কবিতায়। এরপর ফিরে এসে রাজার অনুচর হিসেবে যোগ দিলে তাঁর সাথে রানীর এক সহচরীর বিবাহ হয়। কিন্তু পরবর্তীকালের লেখা থেকে অনুমিত হয় যে এই রাজকীয় বিবাহ খুব একটা সুখকর ছিল না।



    1370 খ্রিস্টাব্দে চসারকে পাঠানো হয় ইটালি। এই সময় তাঁর কবিতায় ইতালীয় সাহিত্যের বেশ প্রভাব পরে যার ছায়া আমরা দেখতে পাই তাঁর অসম্পূর্ণ কবিতা  “Hous of Fame”এ। Dante, Ovid, Virgil তাঁর লেখার রসদ জোগালেও এই কবিতার বিষয় ও মৌলিক ভাবনার জন্য চসারের সাহিত্য ক্ষমতার প্রশংসা না করে পারা যায়না। 1386 খ্রিস্টাব্দে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন। কিছুদিন পর ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৎ ব্যক্তিদের প্রতিকূল হয়ে পরে। চসার বিভিন্ন পার্টি থেকে ডাক পেলেও তিনি John of Gaunt এর পার্টির সাথেই আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন।
 “Romaunt of the Rose” তাঁর জীবনের প্রথম কাব্য কীর্তি। ফরাসি কবিতা “Roman de la Rose” এর অনুবাদ হলেও কবিতাটির চসারের কবি প্রতিভা কোনো ভাবেই ক্ষুন্ন হয়নি।



  তাঁর পৃষ্ঠপোষক John of Gaunt এর স্ত্রী Blanche এর মৃত্যুর পর যিনি রচনা করেন Dethe of Blanche the Duchesse যা Boke of Duchesse হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। এছাড়াও তাঁর ছোট কবিতার মধ্যে Truth বেশ জনপ্রিয়।
 ইতালিতে থাকাকালীন তিনি রচনা করেন Troilus and Criseyde. এটি একটি ৮০০০ লাইনের কবিতা। Boccaccio র Il Filostroto র অনুপ্রেরণায় কবিতাটির জন্ম। এই কবিতার মূল ভাবনার ওপর নির্ভির করে নাট্যকার সেক্সপিয়ার রচনা করেছিলেন নাটক ট্রইলাস ও ক্রিসেডি।
House of Fame এর পর তিনি রচনা করেন আরেকটি কাব্য “The Legende of Goode Wimmen” .  এটি সমকালীন ও পূর্বতন কিছু মহিয়সী নারীর জীবনী ও কথা বর্ণনা করা আছে। কিন্তু গ্রন্থটি নয়জন নারীর সম্পর্কে লেখার পরে শেষ হয়ে যায়। এটিকে অসমাপ্ত কাব্য হিসেবেই ধরা হয়। হয়তো সেই সময়েই তাঁর মনে শুরু হয়ে গেছিল বিখ্যাত Canterbury Tales এর প্লটের বুনন।

  Canterbury Tales চসারের জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্য কর্ম। তিনি প্রধানত চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের সমাজ ও জীবনযাত্রার কথা তারই অধিবাসীরা নিজের মুখে বলুক। তাই তিনি সৃষ্টি করলেন কিছু পর্যটকের যারা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সামাজিক স্তরের প্রতিনিধি। এক রাত্রে সকলে কাকতলীয় ভাবে একত্রিত হওয়ার পর শুরু হলো সকলের নিজ নিজ গল্প বলা। এই গল্পগুলির মাধ্যমেই উঠে আসে ইংল্যান্ডের সমাজ, সংস্কার, রীতি-নীতি, ও রাজনীতি। এই কাব্যটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি কিন্তু তাঁর এই অসাধারণ ভাবনাটি আজ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জীবনযাত্রার এক সুন্দর ও সফল নথি হিসেবে পরিচিত।

  ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। Westminister Abbey তে তাঁর স্মৃতি সৌধ রচিত হয়। চসার ইংরাজি  তথা বিশ্বসাহিত্যের জয়যাত্রার একজন উজ্জ্বল পথ প্রদর্শক। তিনি অবিস্মরণীয়।

1 টি মন্তব্য:

Thank you for your valueable comment.

ল্যুভ মিউজিয়াম

 #ঘরকুণোর_বিদেশ_যাত্রা #কেয়া_চ্যাটার্জি প্যারিস পর্ব • #ল্যুভর মিউজিয়াম ও প্যারিসের একটি সন্ধ্যে ১১৯০ খ্রিস্টাব্দ যখন প্যারিস শহরটি এতটা বিস...