শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ভালোবাসার সংজ্ঞা হয়না।

ভালোবাসা। চার অক্ষরের শব্দটা আসলে ওজনে ভীষণ ভারী। শব্দটার সঙ্গে জুড়ে থাকে দায়িত্ব, কর্তব্য, একে অপরকে আজীবন শ্রদ্ধা ও সম্মান করার দায়, যেকোনো পরিস্থিতিতে।    


শব্দটা আবার ঠিক ম্যাজিকের মতো। নিমেষে এক ছোঁয়ায় সব কষ্ট, অভিমান, অনুযোগ ভ্যানিশ। আবার চিরবসন্ত উড়ে এসে বসে মনের মনিকোঠায়।


ভালোবাসা আকাশ নয়, নিজের ঘরের ভীষণ আপন কোণ। সারাদিনের পরে যার কোলে নিশ্চিন্তে চোখ বোজা যায়।


ভালোবাসার মানুষটা প্রতিপদে মন্দগুলো বিচার করে না। গুণ নিয়েও গান করে না। পিছিয়ে পড়লে বলে না, আর হবে না, থেমে যাও। বরং হাত ধরে আরেকটু এগিয়ে দেয়, হোঁচট খেলে অপেক্ষা করে, আবার তুলে ধরে। 


ভালোবাসা বেড়িবিহীনক্ষণ। যখন ভীষণ ভাবে আমি হয়ে যাওয়া যায়। লোকে কি ভাববে, ভাবতে বলে না কেউ। ভালোবাসা ভাগাভাগি করে বসা স্কুলের বেঞ্চ, একই ভাঁড়ের চা। মুহূর্তটাই ভীষণ দামী।


ভালোবাসা আসলে আজীবনের পণ। মানভঞ্জনের আবশ্যিক অবসর। নৈঃশব্দ বুঝে নেওয়ার অভ্যাস। ভেঙে ফেলার বদলে গড়ে তোলার শিক্ষা। উভয় পক্ষের আমৃত্যু সম্মান রক্ষার দায়। 

 

ভালোবাসা বসন্তের দখিনা বাতাস। সন্ধ্যেবেলা জানলা বন্ধ করতে যাওয়ার আগে যার ছোঁয়ায় হাজার প্রজাপতি উড়ে যায় মনের গহীনে। মনে হয় পৃথিবীটা খুব সুন্দর হতে পারে।


কেয়া চ্যাটার্জী

বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

অনুগল্প

প্রতিঘাত
কেয়া চ্যাটার্জী


অজিতের নিথর শরীরটার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে পূর্বা। একবছরের বিবাহিত জীবনে সমাপ্তি ঘটল। পাশে দাঁড়ানো অফিসার তাঁর মহিলা সহকর্মীকে ইশারায় উঠিয়ে নিয়ে যেতে বললেন পূর্বাকে। শেখর চিৎকার করে বলে উঠল, “না না অফিসার বৌদিকে নিয়ে যাবেন না। ও তো জ্ঞানত কিছু করেনি। এর আগেও ও ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেরিয়েছে, কথা বলেছে। আমরা কতো হাসাহাসি করেছি। সকালবেলা কিন্ত ওর কিছু মনে পড়তো না। বিশ্বাস করুন।” অফিসার বিরক্ত হয়ে বললেন, “আরে মশাই, আপনার কথার ভিত্তিতে কি ওঁকে ছেড়ে দিতে পারি। এত বড় একটা কেস। সরুন তো। আমাদের কাজ করতে দিন।” নিজের স্বামীকে গলা টিপে খুন করার অপরাধে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হলো পূর্বাকে।  জেল হেফাজতে থাকাকালীন ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষায় জানা গেল তার সপ্লিট পার্সোনালিটি আছে। ঘুমের মধ্যে সে আলাদা এক মানুষ। জেগে থাকলে সব কিছুই স্বাভাবিক। দীর্ঘ একবছর বিচার চলে। পুলিশ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। পূর্বা আর ফেরেনি শশুর বাড়ি। নিরীহ মানুষগুলোকে ঠকিয়ে কি লাভ! অন্যায় নিশ্চই করেছে সে। খুন করেছে। একটা মানুষকে মেরে ফেলেছে। শাস্তি পাবে না? কিন্তু মৃত মানুষটা কি নিরপরাধ ছিল? পূর্বার চোখে ভেসে উঠল শ্রীতমার মৃত শরীর। বোকা মেয়েটা ভালোবেসেছিল অজিতকে। কিন্তু অজিতের শরীরে ছিল যৌবনের সর্বগ্রাসী আগুন। সেই আগুনে পুড়ে গেল শ্রীতমার জীবন। সন্তান সম্ভবা মেয়েটাকে অস্বীকার করলো অজিত। তখন আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই মেয়েটার। পূর্বা অনেক চেষ্টা করেছিল বোঝানোর, রুখে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই চালাতে পারল না শ্রী। পাশে পেল না পরিবারকে। শেষে একদিন গলায় ফাঁস দিয়ে...
 পূর্বা একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিল। অজিতের চোখে মৃত্যুর ভয়টা তাকে তৃপ্তি দেয়। অজিত জেনে গেছে কোন অপরাধে তার এই শাস্তি। তিন বছর ধরে প্ল্যান করে শ্রীর মৃত্যুর দিনটাকেই বেছে নিয়েছিল পূর্বা কাজটা করার জন্য। তার পাশে কি তার পরিবার থাকবে আর?  তার গায়ে যে খুনের প্রলেপ লেগে আছে। হয়তো না, হয়তো  হ্যাঁ। তবে যেটাই হোক প্রতিঘাতটা খুব দরকার ছিল। ভীষণ দরকার ছিল। যেখানে বিচারের হাত পৌঁছয় না, যেখানে প্রতিবাদের শব্দ কড়া নাড়ে না সেখানে প্রতিশোধই একমাত্র উপায়। পূর্বা এগিয়ে চলল নতুন জীবনের পথে, হয়তো একাই।

ল্যুভ মিউজিয়াম

 #ঘরকুণোর_বিদেশ_যাত্রা #কেয়া_চ্যাটার্জি প্যারিস পর্ব • #ল্যুভর মিউজিয়াম ও প্যারিসের একটি সন্ধ্যে ১১৯০ খ্রিস্টাব্দ যখন প্যারিস শহরটি এতটা বিস...